Dilip Ghosh Meet Mamata Banerjee :বুধবার (30/04/2025) দীঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা দিলীপ ঘোষ। এই সফরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মিলিত হন। “দিদি” বলে সম্বোধন করে মমতাকে তিনি জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণের জন্য অভিনন্দন জানান। তবে, এই সাক্ষাতের মধ্যেই রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়ে গেছে।
বিজেপির ‘নিষেধ’ উপেক্ষা করে দিলীপ ঘোষের মমতা সঙ্গে দেখা! সারসংক্ষেপ টেবিল (Dilip Ghosh Meet Mamata Banerjee ):
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
ঘটনা | দীঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ। |
দিলীপ ঘোষের বক্তব্য | “মন্দির দর্শন আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলীয় নিষেধাজ্ঞা মানিনি। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া আমার অধিকার।” |
মমতার প্রতিক্রিয়া | “মন্দির নির্মাণে কঠোর পরিশ্রম হয়েছে। ভক্তদের ভিড় দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।” |
বিজেপির অবস্থান | রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এটিকে “ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত” বলে জানান, দলীয় সমর্থন নেই। |
সুবেন্দু অধিকারীর ভূমিকা | তিনি অনুষ্ঠানে না গিয়ে কন্টাইয়ে ‘সনাতন ধর্ম সম্মেলন’ আয়োজন করেন। |
রাজনৈতিক প্রভাব | বিজেপির অভ্যন্তরে বিভেদের ইঙ্গিত, তবে ধর্মীয় আয়োজনে শুভেচ্ছা বিনিময়কে মানবিক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। |

কেন আলোচনায় দিলীপ ঘোষ ?
জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনীতে বিজেপির অন্যান্য নেতারা অনুপস্থিত থাকলেও দিলীপ ঘোষ স্বেচ্ছায় অংশ নেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার “ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত” বলে উল্লেখ করেন এবং দলীয় সমর্থন নেই বলে জানান। অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা সুবেন্দু অধিকারী এই অনুষ্ঠানে না গিয়ে কন্টাইয়ে ‘সনাতন ধর্ম সম্মেলন’-এর আয়োজন করেছিলেন, যা কলকাতা হাইকোর্টের অনুমোদন পেয়েছিল।
দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট করে বলেন, “মন্দির দর্শনে দলের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমি জগন্নাথদেবের পূজো করতে এসেছি, এটা আমার ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস।” তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মমতা-দিলীপের কথোপকথন
মন্দির পরিদর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের আলোচনা হয়। মমতা জানান, এই মন্দির নির্মাণ একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। “গতকাল (বুধবার) প্রচণ্ড গরম ছিল, চার ঘণ্টা ধরে যজ্ঞ করেছি। তাপমাত্রা এত বেশি ছিল যে মনে হচ্ছিল পুড়ে যাচ্ছি। কিন্তু আজ থেকে ভক্তদের ভিড় দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি,” বলেন তিনি।
দিলীপ ঘোষ মন্দিরের স্থাপত্য ও নির্মাণ প্রশংসা করে বলেন, “এই মন্দির আগামী কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমবঙ্গের গর্ব হবে।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপির কিছু নেতা দিলীপ ঘোষের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। এমপি সৌমিত্র খান সামাজিক মাধ্যমে এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে, সুকান্ত মজুমদার শুধু এটুকুই বলেছেন, “মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের ওপর হামলা ও মন্দির ভাঙার ঘটনাকে উপেক্ষা করে আমরা এই অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। দিলীপবাবু ব্যক্তিগতভাবে গেছেন।”
অন্যদিকে, সুবেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, “অন্যের কাজ বা বক্তব্য নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। আমি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যা বক্তব্যের জবাব দিই।”
দিলীপ ঘোষের ব্যাখ্যা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, “অক্ষয় তৃতীয়া একটি শুভ দিন। এই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আমার জন্য স্বাভাবিক। আমাকে দীঘায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাই এসেছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “হিন্দু জাগরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়, মন্দির প্রতিষ্ঠাও তারই অংশ।”
কন্টাইয়ে কেন যাননি— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সেখানে আমন্ত্রিত ছিলাম না। যেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছি, সেখানেই গেছি।”
উপসংহার
রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও ধর্মীয় আয়োজনে শুভেচ্ছা বিনিময় এই ঘটনায় একটি মানবিক দিক ফুটে উঠেছে। দিলীপ ঘোষের ভাষায়, “মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে সব রাজনৈতিক বিভেদ বাইরে রাখা উচিত। এখানে শুধুই মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধন।”
এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের Chief Secretary মনোজ পান্ত ও তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ। তবে, বিজেপির অন্যান্য বড় নেতাদের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।