Axiom-4 Launch :ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন ইতিহাস রচিত হলো। গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা প্রথম ভারতীয় হিসেবে ৪১ বছর পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পা রাখলেন। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের সাফল্যের সঙ্গে উৎক্ষেপণের পর শুক্লা ও তাঁর সহযোগী মহাকাশচারীরা ২৮.৫ ঘণ্টার যাত্রা শেষে আইএসএস-এ নোঙর করলেন। এই মিশন কেবল শুক্লার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জন্যও এক যুগান্তকারী মুহূর্ত।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ টেবিল (Axiom-4 Launch):
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
মিশনের নাম | অ্যাক্সিয়ম-৪ (Axiom-4) |
মহাকাশচারী | গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা (প্রথম ভারতীয় হিসেবে আইএসএস-এ) |
উৎক্ষেপণ তারিখ | ২৫ জুন, ২০২৫ |
উৎক্ষেপণ স্থান | নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা |
মিশন সময়কাল | ১৪ দিন |
প্রধান গবেষণা | মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে মেথি ও মুং ডালের অঙ্কুরোদগম, ডায়াবেটিস গবেষণা |
ডকিং সময় | উৎক্ষেপণের ২৮.৫ ঘণ্টা পর আইএসএস-এ সংযোগ |
ভারতের সাথে সংশ্লিষ্টতা | ইসরো ও ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির সহযোগিতায় গবেষণা |
বিশেষ ঘটনা | প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শিক্ষার্থীদের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ |

এক আকস্মিক সুযোগ থেকে মহাকাশযাত্রা
শুক্লার এই যাত্রা প্রায় হয়ইতো হয়নি! তাঁর বাবা শম্ভু শুক্লা স্মরণ করেন, কীভাবে এক বন্ধুর অনুরোধে শুভাংশু ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি (এনডিএ)-র ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। “২০০১-০২ সালে একটি ল্যান্ডলাইন ফোন কলেই আমরা জানতে পারি সে এনডিএতে নির্বাচিত হয়েছে,” বলেছেন শম্ভু। পরিবারটি চাইতেন শুভাংশু সিভিল সার্ভিসে যোগ দিক, কিন্তু ভাগ্য তাঁকে নিয়ে গেল অন্য পথে।
লক্ষ্মৌর গর্ব, ভারতের অহংকার
শুক্লার স্কুল, সিটি মন্টেসরি স্কুল (সিএমএস), এই সাফল্য উদ্যাপনে একটি পাবলিক ওয়াচ পার্টির আয়োজন করে। স্কুলের প্রেসিডেন্ট গীতা গান্ধী কিংডন বলেন, “শুভাংশুর গল্প আমাদের ‘এডুকেশন ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিটি অ্যান্ড পিস’ মিশনের জীবন্ত উদাহরণ।” শুক্লার স্ত্রী কমনা ও ছয় বছরের ছেলে কিয়াশও এই সাফল্যে অংশীদার।
১৪ দিনের বৈজ্ঞানিক অভিযান
আইএসএস-এ থাকাকালীন শুক্লা ভারতীয় খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত একাধিক পরীক্ষা চালাবেন, যেখানে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে মেথি ও মুং ডালের অঙ্কুরোদগম নিয়ে গবেষণা করা হবে। ইসরো ও নাসার যৌথ প্রকল্পের অংশ হিসেবে তিনি ডায়াবেটিস গবেষণায়ও অংশ নেবেন। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্কুলছাত্রদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
উৎক্ষেপণ থেকে ফিরে আসা: এক ঝলকে মিশন
- উৎক্ষেপণ: ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন-৯ রকেটে করে ড্রাগন ক্যাপসুলে যাত্রা।
- আইএসএস ডকিং: ২৮.৫ ঘণ্টার যাত্রার পর হারমোনি মডিউলে সংযোগ।
- গবেষণা: ১৪ দিন ধরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।
- প্রত্যাবর্তন: ড্রাগন ক্যাপসুলে পৃথিবীতে অবতরণ।

ভারতের মহাকাশ স্বপ্নের নতুন উচ্চতা
শুভাংশু শুক্লার এই মিশন শুধু একটি ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি ভারতের গগনযান প্রকল্পের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাঁর সাফল্য ভবিষ্যতের ভারতীয় মহাকাশচারীদের জন্য পথ দেখাবে, যেখানে মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।
শেষ কথা
“আমরা চাঁদে পৌঁছেছি, এখন লক্ষ্য মহাকাশের অন্যান্য গ্রহ,” — শুক্লার এই যাত্রা ভারতকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। তাঁর পথচলা শুধু একটি মিশন নয়, লক্ষ্মৌর এক ছেলের স্বপ্নের বিজয়, আর এক দেশের মহাকাশ অভিযানের নতুন অধ্যায়।