Delhi Elections 2025 :২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছে, যা আম আদমি পার্টি (AAP)-র ১২ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এই নির্বাচনে BJP সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দিল্লিতে তাদের রাজনৈতিক শুষ্কতা কাটিয়ে উঠেছে। AAP-এর জাতীয় সংযোজক এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আরভিন্দ কেজরিওয়াল নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে BJP-র পারভেশ বর্মার কাছে পরাজিত হয়েছেন। এই বিজয়ের পাশাপাশি, AAP-এর আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা, যেমন মনীশ সিসোদিয়া এবং সৌরভ ভরদ্বাজও তাদের আসন হারিয়েছেন।
২০২৫ দিল্লি নির্বাচন: সারসংক্ষেপ টেবিল :
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
নির্বাচন ফলাফল | BJP সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, AAP-র ১২ বছরের শাসনের অবসান। |
কেজরিওয়ালের পরাজয় | নয়াদিল্লি আসনে BJP-র পারভেশ বর্মার কাছে হেরে যান আরভিন্দ কেজরিওয়াল। |
মূল কারণ | ১. প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা ২. মধ্যবিত্ত ভোটারদের সমর্থন হারানো ৩. AAP-কংগ্রেস বিভাজন ৪. নাগরিক সমস্যা ৫. দুর্নীতির অভিযোগ |
মধ্যবিত্ত ভোটার | মধ্যবিত্ত শ্রেণি BJP-র দিকে ঝুঁকেছে, AAP-র ভোট ৯% কমেছে। |
শীশ মহল কেলেঙ্কারি | কেজরিওয়ালের বিলাসবহুল বাসভবনের অভিযোগে সাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবি ক্ষতিগ্রস্ত। |
উপসংহার | BJP-র বিজয়, AAP-র পতন এবং ‘আম আদমি’ রাজনীতির সমাপ্তির ইঙ্গিত। |
কী কারণে AAP হারাল ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক AAP-র এই পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন।
১. প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা
আরভিন্দ কেজরিওয়াল ২০১৫ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে দিল্লির জনগণের কাছে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেমন যমুনা নদী পরিষ্কার করা, বায়ু দূষণ কমানো এবং ল্যান্ডফিল দূর করা। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কিদওয়াই বলেছেন, “কেজরিওয়াল মহিলা ভোটারদের জন্য বিনামূল্যে সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু আইনগতভাবে তা পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মানুষ বুঝতে পেরেছিল।”
যমুনা নদী এখনও দূষিত, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্মগ টাওয়ার এবং অ্যান্টি-স্মগ গানের মতো উদ্যোগগুলি কার্যকর হয়নি, এবং ল্যান্ডফিলগুলি এখনও দিল্লির পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

Delhi Elections 2025
২. মধ্যবিত্ত ভোটারদের সমর্থন হারানো
মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা আগে জাতীয় নির্বাচনে BJP-কে এবং রাজ্য নির্বাচনে AAP-কে সমর্থন করত, এবার তারা BJP-র দিকে ঝুঁকেছে। কিদওয়াই বলেছেন, “কেজরিওয়ালের দুর্নীতির অভিযোগ এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার কারণে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ডাক্তার, সরকারি কর্মচারী এবং ব্যবসায়ীরা BJP-র দিকে চলে গেছেন।”
৩. AAP-কংগ্রেস বিভাজন
২০২৫ সালের নির্বাচনে AAP এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হওয়াও AAP-র পরাজয়ের একটি বড় কারণ। কিদওয়াই বলেছেন, “৬৫টি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, কিন্তু তারা AAP-র ভোট ভাগ করে নিয়েছে।”
৪. নাগরিক সমস্যা
২০২২ সালের MCD নির্বাচনে AAP-র বিজয় শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। দিল্লির ভোটাররা MCD এবং দিল্লি সরকারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেননি। খারাপ রাস্তা, অপরিচ্ছন্নতা এবং পানির অভাবের মতো সমস্যাগুলি AAP-র দরজায় পৌঁছে গেছে।
৫. দুর্নীতির অভিযোগ
কেজরিওয়ালের ‘শীশ মহল’ কেলেঙ্কারি তার সাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবিকে ধ্বংস করেছে। BJP অভিযোগ করেছিল যে কেজরিওয়াল তার সরকারি বাসভবনে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, যেখানে জিম, সানা এবং জ্যাকুজির মতো বিলাসবহুল সুবিধা রয়েছে। এই অভিযোগগুলি কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
৬. দুর্নীতির অভিযোগ এবং গ্রেপ্তার
কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তার গ্রেপ্তার। দিল্লির মদ নীতি কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটি ভারতের ইতিহাসে প্রথম কোনো সক্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের ঘটনা। যদিও তিনি সেপ্টেম্বর মাসে জামিন পেয়েছিলেন, তবুও এই ঘটনা তার সততার উপর প্রশ্ন তুলেছে।
৭. AAP-কংগ্রেস বিভাজন
২০২৫ সালের নির্বাচনে AAP এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হওয়াও AAP-এর পরাজয়ের একটি কারণ। কংগ্রেস প্রার্থীরা বেশ কিছু আসনে AAP-এর ভোট ভাগ করে নিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত BJP-এর সুবিধা এনে দিয়েছে।

Delhi Elections 2025
উপসংহার
২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে BJP-র বিজয় এবং AAP-র পতন দিল্লির রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আরভিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন AAP জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং দুর্নীতির অভিযোগের কারণে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরাজয় শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের পতনই নয়, বরং ‘আম আদমি’ রাজনীতিরও সমাপ্তি বলে মনে করা হচ্ছে।