Digha Rath Yatra 2025 :দীঘায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব। সম্প্রতি উদ্বোধিত নতুন জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে শহর জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। হাজার হাজার ভক্তের সমাগম এই মহাযজ্ঞে, যার জন্য স্থানীয় প্রশাসন নেয়া হয়েছে নানান নিরাপত্তা ও ভিড় ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা।
দীঘা রথযাত্রা ২০২৫ – সংক্ষিপ্ত তথ্যপঞ্জি ( Digha Rath Yatra 2025 ) :
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
স্থান | দীঘা, নতুন জগন্নাথ মন্দির |
তারিখ | ২৭ জুন, শুক্রবার |
প্রধান অতিথি | মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
রথযাত্রার সময় | সকাল ৯:৩০টায় পূজা শুরু, ২:৩০টায় রথযাত্রা, ৪:০০টায় মাসি বাড়ি পৌঁছানো |
বিশেষ নিয়ম | ভক্তরা রশি টানতে পারবেন না, তবে ব্যারিকেড থেকে স্পর্শ করতে পারবেন |
নিরাপত্তা | রাস্তায় ব্যারিকেড, পুলিশি তত্ত্বাবধান |
দর্শনের সুযোগ | ১৫ দিন অনাসর পর মন্দির খোলা, ভক্তরা নতুন সাজে দেবদর্শন করতে পারবেন |
ভোগ | ৫৬ প্রকার ভোগ (খিচুড়ি, মিষ্টি, পায়েস ইত্যাদি) |
আলোকসজ্জা | চন্দননগরের শিল্পীদের তৈরি বিশেষ সজ্জা |

সিএম-এর তদারকি ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দীঘায় পৌঁছে গেছেন রথযাত্রার প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে। বৃহস্পতিবার, তিনি জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্ট কমিটির সঙ্গে একটি সমন্বয় বৈঠক করেন, যেখানে উৎসবের নিরাপত্তা ও লজিস্টিক্স নিয়ে আলোচনা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে গেট নং ৭ থেকে গেট নং ৩ পর্যন্ত হেঁটে তিনি রথের চলাচলের রাস্তা পরীক্ষা করেন। এসময় পাঁচ রাজ্যমন্ত্রী আরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য, সুজিত বসু ও স্নেহাশীষ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

রথযাত্রার বিশেষ রীতি ও সময়সূচি
মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, রথযাত্রার দিন ভক্তরা জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে মন্দিরের মূল পাথরের মূর্তিগুলো থাকবে গর্ভগৃহে, রথে উঠবে নিমকাঠে তৈরি কাঠের মূর্তি। শুক্রবার সকাল ৯:৩০টায় শুরু হবে বিশেষ পূজার্চনা, এরপর ২:০০ থেকে ২:৩০টার মধ্যে হবে আর্চনা। মুখ্যমন্ত্রী এই রীতি শুরুর আগেই মন্দিরে পৌঁছবেন। রথযাত্রা শুরু হবে ২:৩০টায় এবং ৪:০০টার মধ্যে রথ পৌঁছে যাবে মাসি বাড়ি (মাসীর বাড়ি)।
ভিড় ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা
জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য রথের রাস্তায় ব্যারিকেড বসানো হবে। ভক্তরা ব্যারিকেডের পিছন থেকে রথযাত্রা দেখতে পারবেন এবং রশি স্পর্শ করার সুযোগ পাবেন। ৭৫০ মিটার দীর্ঘ এই রথযাত্রাপথে কয়েকটি স্থানে রথ থামবে, যেখানে ভক্তরা প্রার্থনা করতে পারবেন।

১৫ দিন পর জগন্নাথ দর্শন
স্নানযাত্রার পর ১৫ দিনের অনাসর শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৬:৩০টায় জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা খুলে দেওয়া হয়। নেত্রোৎসব অনুষ্ঠানে ভক্তরা নতুন পোশাকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দর্শন পান। এদিন বিশেষ রীতি হিসেবে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়, যাতে ছিল নানান ভাজা পদ, খিচুড়ি, ডাল, সবজির তরকারি, বাঙালি মিষ্টি ও পায়েস।
রশি টানার অনুমতি নেই, কিন্তু স্পর্শ করা যাবে
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাস্তায় নেমে ভক্তরা রথের রশি টানতে পারবেন না। তবে ব্যারিকেডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রশি স্পর্শ করার সুযোগ দেওয়া হবে। “অনিয়ন্ত্রিত ভিড় এড়াতে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না, তবে ভক্তরা ব্যারিকেডের পাশ থেকে রশি স্পর্শ করতে পারবেন,” বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমুদ্রশহরের সাজ
দীঘার সৈকত শহরটি সেজেছে উৎসবের রঙে। চন্দননগরের শিল্পীদের তৈরি আলোকসজ্জা, দেবতার বিশাল কাটআউট ও মন্দিরের আদলে সাজানো হয়েছে শহর। কলকাতা থেকে দীঘা পর্যন্ত ১৮০ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে দেখা যাবে জগন্নাথ ধামের ব্যানার ও ধর্মীয় পতাকা।
এই প্রথম দীঘায় রথযাত্রার আয়োজন, যা ইতিমধ্যেই স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। প্রশাসন ও মন্দির কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রয়াসে এই উৎসব হয়ে উঠবে।