History of Chhaava :মুভি দেখার আগে জেনে নিন, ছাওা (শম্ভাজী মহারাজ) কে ছিলেন ?

History of Chhaava :শম্ভাজী মহারাজ, যিনি ছাওা নামেও পরিচিত, ছিলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি শুধু একজন সাহসী যোদ্ধাই ছিলেন না, বরং মারাঠা সাম্রাজ্যের গৌরব ও ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে তাঁর অবদান অপরিসীম। শম্ভাজী মহারাজের জীবন সংগ্রাম, সাহসিকতা এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক শম্ভাজী মহারাজের জীবন ও ইতিহাস।

শম্ভাজী মহারাজ (ছাওা)Chhaava: সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ

বিষয়বিবরণ
পুরো নামশম্ভাজী মহারাজ (ছাওা)
জন্ম১৬৫৭ সালের ১৪ মে
পিতামাতাছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ও সইবাই নিম্বালকর
রাজ্যাভিষেক১৬৮০ সালে মারাঠা সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন
মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াইঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন
বন্দিত্ব ও মৃত্যু১৬৮৯ সালে মোগলদের হাতে বন্দী হন এবং ১১ মার্চ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়
উত্তরাধিকারকবি, সাহিত্যিক এবং মারাঠা সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক
মূল বার্তাদেশপ্রেম, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের প্রতীক

জয় শম্ভাজী! জয় শিবাজী!
জয় মহারাষ্ট্র!

History of Chhaava
History of Chhaava

Read More :

Mahashivratri :মহাশিবরাত্রি শিবের মহিমায় ডুব দিয়ে ভক্তদের রাতজাগা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা, কেন পালন করা হয় এই উৎসব ?

শম্ভাজী মহারাজের জন্ম ও শৈশব

শম্ভাজী মহারাজের জন্ম ১৬৫৭ সালের ১৪ মে। তিনি শিবাজী মহারাজের প্রথম স্ত্রী সইবাই নিম্বালকরের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই শম্ভাজী মহারাজ অত্যন্ত মেধাবী ও সাহসী ছিলেন। তাঁর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শিবাজী মহারাজের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। তিনি শুধু যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শীই হননি, বরং সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শাস্ত্রীয় জ্ঞানেও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।ছোটবেলা থেকেই সম্ভাজী সংস্কৃত, মারাঠি, ফারসি, এবং পর্তুগিজ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও, যুদ্ধবিদ্যা ও রাজনীতির শিক্ষা গ্রহণ করেন।

শম্ভাজী মহারাজের রাজ্যাভিষেক

শিবাজী মহারাজের মৃত্যুর পর ১৬৮০ সালে শম্ভাজী মহারাজ মারাঠা সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তাঁর রাজ্যাভিষেকের সময় মারাঠা সাম্রাজ্য মোগল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িত ছিল। শম্ভাজী মহারাজ তাঁর পিতার আদর্শকে ধারণ করে মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। তিনি শুধু একজন যোদ্ধাই ছিলেন না, বরং একজন দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন।

সামরিক জীবন ও শাসন

তিনি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষ ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আওরঙ্গজেব দক্ষিণ ভারতে মারাঠাদের পরাজিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সম্ভাজী মহারাজের নেতৃত্বে মারাঠারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি পর্তুগিজ ও ইংরেজদের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়েছিলেন।

বন্দিত্ব ও আত্মত্যাগ

১৬৮৯ সালে সম্ভাজী মহারাজকে মোগল বাহিনী গ্রেফতার করে। তাঁকে আওরঙ্গজেবের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ইসলাম গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু সম্ভাজী মহারাজ তাতে রাজি হননি। এই কারণে তাঁকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তাঁর এই আত্মত্যাগ মারাঠা জাতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।

মোগলদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

শম্ভাজী মহারাজের শাসনামলে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মারাঠা সাম্রাজ্য দখলের জন্য ব্যাপক আক্রমণ চালান। শম্ভাজী মহারাজ মোগলদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেন এবং বহুবার তাদের পরাজিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে মারাঠা বাহিনী মোগলদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিজয় অর্জন করে।

তবে, ১৬৮৯ সালে সংঘটিত একটি যুদ্ধে শম্ভাজী মহারাজ মোগলদের হাতে বন্দী হন। ঔরঙ্গজেব তাঁকে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু শম্ভাজী মহারাজ তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর এই অসামান্য সাহসিকতা ও দেশপ্রেম ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

History of Chhaava
History of Chhaava

শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু

ঔরঙ্গজেবের আদেশে ১৬৮৯ সালের ১১ মার্চ শম্ভাজী মহারাজকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁকে অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়, যা ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু মারাঠা সাম্রাজ্যের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল, কিন্তু তাঁর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ মারাঠা বাহিনীকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর মৃত্যুর পরেও মারাঠারা মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত ঔরঙ্গজেবের পরাজয় নিশ্চিত করে।

শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু ভারতের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। তাঁর মৃত্যু শুধু একজন রাজার পতনই নয়, বরং একজন বীরের আত্মত্যাগের গল্প, যা দেশপ্রেম ও সাহসিকতার এক অনন্য উদাহরণ। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক কীভাবে শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু ঘটেছিল।


মোগলদের হাতে বন্দিত্ব

১৬৮৯ সালে, মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মারাঠা সাম্রাজ্য দখলের জন্য ব্যাপক আক্রমণ চালান। শম্ভাজী মহারাজ মোগলদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করছিলেন। কিন্তু একদিন, সংঘটিত একটি যুদ্ধে মোগল সেনাপতি মুকাররাব খানের নেতৃত্বে মোগল বাহিনী শম্ভাজী মহারাজকে ঘিরে ফেলে। এই সময় তিনি সঙ্গী কাভি কালাশের সাথে একটি গোপন স্থানে অবস্থান করছিলেন। মোগলরা তাঁদের অবস্থান জানতে পেরে হঠাৎ আক্রমণ করে এবং শম্ভাজী মহারাজ ও কাভি কালাশকে বন্দী করে।


ঔরঙ্গজেবের প্রস্তাব ও শম্ভাজীর প্রত্যাখ্যান

শম্ভাজী মহারাজকে বন্দী করে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সামনে হাজির করা হয়। ঔরঙ্গজেব শম্ভাজী মহারাজকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন। তিনি শম্ভাজীকে বলেছিলেন যে, যদি তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তাহলে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং সম্মানের সাথে মুক্তি দেওয়া হবে।

কিন্তু শম্ভাজী মহারাজ ঔরঙ্গজেবের এই প্রস্তাব সগর্বে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার ধর্ম ও দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত, কিন্তু কখনোই আমার নীতি ও আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব না।” তাঁর এই সাহসিকতা ও দৃঢ়তা ঔরঙ্গজেবকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।


নির্মম শাস্তি ও মৃত্যু

ঔরঙ্গজেব শম্ভাজী মহারাজের প্রত্যাখ্যানে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে নির্মম শাস্তি দেওয়ার আদেশ দেন। ১৬৮৯ সালের ১১ মার্চ, শম্ভাজী মহারাজ ও তাঁর সঙ্গী কাভি কালাশকে প্রকাশ্যে অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়।

শম্ভাজী মহারাজের জিহ্বা কেটে ফেলা হয়, তাঁর চোখ উপড়ে ফেলা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়। এই নির্মম শাস্তি শুধু শম্ভাজী মহারাজের জীবনই নয়, বরং সমগ্র মারাঠা সাম্রাজ্যের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল।

History of Chhaava
History of Chhaava
History of Chhaava
History of Chhaava

শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যুর প্রভাব

শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু মারাঠা বাহিনীকে আরও বেশি সংঘবদ্ধ করে তোলে। তাঁর আত্মত্যাগ মারাঠা সেনাদের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যুর পর, তাঁর ভাই রাজারাম এবং পরবর্তীতে তাঁর পুত্র শাহু মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত, মারাঠারা ঔরঙ্গজেবের পরাজয় নিশ্চিত করে এবং ভারতে মোগল শক্তির পতন ঘটায়।


উপসংহার

শম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু শুধু একজন রাজার পতনই নয়, বরং এটি দেশপ্রেম, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের এক অনন্য উদাহরণ। তিনি তাঁর ধর্ম, দেশ এবং আদর্শের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, যা ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। শম্ভাজী মহারাজের জীবন ও মৃত্যু আজও আমাদের মনে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতার বার্তা বহন করে।

Read More : PM Kisan Samman Nidhi Yojana :PM Kisan 19তম কিস্তির টাকা ঢুকলো কি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ?টাকা পাবেন কি না তা কীভাবে চেক করবেন? সম্পূর্ণ জেনে নিন।

শম্ভাজী মহারাজের উত্তরাধিকার

শম্ভাজী মহারাজ শুধু একজন যোদ্ধাই ছিলেন না, বরং তিনি একজন কবি ও সাহিত্যিকও ছিলেন। তিনি সংস্কৃত ও মারাঠি ভাষায় বহু কবিতা ও গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম মারাঠা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।

শম্ভাজী মহারাজের জীবন ও সংগ্রাম ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি শিবাজী মহারাজের আদর্শকে ধারণ করে মারাঠা সাম্রাজ্যের গৌরবকে বজায় রেখেছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করে।

সম্ভাজী মহারাজের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ আজও ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। তিনি ছিলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, যিনি নিজের জীবন ত্যাগ করেও স্বাধীনতার আদর্শ রক্ষা করেছিলেন। তাঁর উত্তরাধিকার মারাঠা সাম্রাজ্যকে আরও দৃঢ় করেছিল, যা পরবর্তীতে তার পুত্র শাহু মহারাজের রাজত্বে আরও প্রসার লাভ করে।

উপসংহার

শম্ভাজী মহারাজ ছিলেন একজন প্রকৃত বীর, যিনি মোগল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে মারাঠা সাম্রাজ্যের গৌরবকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। তাঁর জীবন সংগ্রাম, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। শম্ভাজী মহারাজের আদর্শ ও দেশপ্রেম আজও আমাদের মনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে।

জয় শম্ভাজী! জয় শিবাজী!
জয় মহারাষ্ট্র!

Leave a comment