History of Mahashivratri :মহাশিবরাত্রি এর পেছনের ইতিহাস ও পুরাণকথা কি ?আসুন জেনে নেওয়া যাক।

History of Mahashivratri :মহাশিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই রাতটি শিবভক্তদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রি পালিত হয়। এই রাতটি শিবের আরাধনা ও ধ্যানের জন্য উৎসর্গীকৃত। কিন্তু কেন এই রাতটি এত গুরুত্বপূর্ণ? এর পেছনের ইতিহাস ও পুরাণকথা কি? আসুন জেনে নেওয়া যাক মহাশিবরাত্রির ইতিহাস ও তাৎপর্য।

মহাশিবরাত্রি (History of Mahashivratri): সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ

বিষয়বিবরণ
উৎসবের নামমহাশিবরাত্রি
কখন পালিত হয়ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে
মূল কারণ১. শিব ও পার্বতীর বিবাহ
২. শিবের হলাহল বিষ পান
৩. শিবলিঙ্গের আবির্ভাব
পালনের রীতি১. উপবাস
২. শিবলিঙ্গে জল, দুধ, বেলপাতা অর্পণ
৩. রাত জেগে ধ্যান ও জপ
আধ্যাত্মিক তাৎপর্যআত্মশুদ্ধি, অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা, শিবের আশীর্বাদ লাভ
বিশেষ স্থানবাংলার শিবমন্দির (তাড়াস, নকুলেশ্বর, বক্রেশ্বর)
মূল বার্তাশিবের ত্যাগ ও মহিমার স্মরণ, জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

জয় মহাদেব!
শিব হোক আমাদের সকলের মঙ্গলকারী।

History of Mahashivratri
History of Mahashivratri

Read More :

Virat Kohli :সচিন-সাঙ্গাকারাকে পিছনে ফেলে সবচেয়ে দ্রুত রেকর্ড-এর মাইলফলক স্পর্শ !বিরাট কোহলির ঐতিহাসিক ১৪,০০০ রান।

মহাশিবরাত্রির পুরাণকথা

মহাশিবরাত্রি নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে নানা কাহিনি প্রচলিত আছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

১. শিব ও পার্বতীর বিবাহ: হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, মহাশিবরাত্রির দিনেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। এই দিনটি শিবভক্তদের কাছে অত্যন্ত শুভ ও পবিত্র। পার্বতী শিবের কঠোর তপস্যা করে তাঁকে পতি হিসেবে পেয়েছিলেন। এই বিবাহের মাধ্যমে শিব ও পার্বতীর মিলন ঘটে, যা সৃষ্টি ও সংহারের মধ্যে সমন্বয়ের প্রতীক।

২. সমুদ্র মন্থন ও হলাহল পান: অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা যখন সমুদ্র মন্থন করছিলেন, তখন সমুদ্র থেকে ভয়ানক বিষ বের হয়, যা হলাহল নামে পরিচিত। এই বিষ সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ধ্বংস করার শক্তি রাখে। তখন শিব এই বিষ পান করে বিশ্বকে রক্ষা করেন। কিন্তু বিষের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে শিবের গলা নীল হয়ে যায়। এই কারণে তিনি নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত হন। মহাশিবরাত্রির দিনটি শিবের এই ত্যাগের স্মরণে পালিত হয়।

৩. শিবলিঙ্গের আবির্ভাব: স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ আছে যে মহাশিবরাত্রির দিনেই শিবলিঙ্গের আবির্ভাব হয়েছিল। শিবলিঙ্গ হল শিবের নিরাকার রূপের প্রতীক। এই দিনে শিবলিঙ্গের পূজা করা হয় এবং ভক্তরা শিবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

History of Mahashivratri
History of Mahashivratri

মহাশিবরাত্রি উদযাপনের রীতি

মহাশিবরাত্রি পালনের নানা রীতি ও প্রথা রয়েছে। এই দিনে ভক্তরা উপবাস রাখেন, শিবলিঙ্গে দুধ, জল, বেলপাতা ও ফুল দিয়ে পূজা করেন এবং রাত জেগে শিবের নাম জপ ও ধ্যান করেন। বেলপাতা শিবের অত্যন্ত প্রিয়, তাই শিবলিঙ্গে বেলপাতা অর্পণ করা হয়। এই দিনে শিবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।

বাংলায় মহাশিবরাত্রি উদযাপন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বাংলার বিভিন্ন শিবমন্দিরে এই দিনে ভক্তদের ভিড় জমে। বিশেষ করে তাড়াসের শিবমন্দির, নকুলেশ্বর শিবমন্দির এবং বক্রেশ্বর শিবমন্দিরে এই দিনে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। তারা শিবের আশীর্বাদ পেতে রাত জেগে কীর্তন ও প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন।

মহাশিবরাত্রির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

মহাশিবরাত্রি কেবল একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, এটি আধ্যাত্মিক জাগরণেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই রাতটি অন্ধকার ও আলোর মধ্যে সংঘাতের প্রতীক। শিব হলেন সংহারের দেবতা, কিন্তু তিনি একইসঙ্গে সৃষ্টিরও উৎস। মহাশিবরাত্রির রাতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনে অন্ধকার ও কষ্ট থাকলেও, শিবের আশীর্বাদে আমরা আলো ও শান্তি পেতে পারি।

এই দিনে শিবের ধ্যান ও আরাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের ভিতরের অহংকার, লোভ ও মোহকে সংহার করে আত্মজ্ঞানের পথে এগিয়ে যেতে পারে। মহাশিবরাত্রি হল আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির একটি সুবর্ণ সুযোগ।

History of Mahashivratri
History of Mahashivratri

উপসংহার

মহাশিবরাত্রি হল শিবের মহিমা ও তাঁর ত্যাগের স্মরণে উদযাপিত একটি পবিত্র উৎসব। এই দিনটি শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের জীবনে আধ্যাত্মিক জাগরণ ও শুভবুদ্ধির বার্তা বহন করে। শিবের আশীর্বাদে এই রাতটি আমাদের অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখায়। তাই, আসুন আমরা সবাই মহাশিবরাত্রির পবিত্র রাতে শিবের ধ্যানে মগ্ন হই এবং তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।

শিব হোক আমাদের সকলের মঙ্গলকারী।
জয় মহাদেব!

Leave a comment