HMPV Virus :চীনে নতুন একটি কোভিড-সদৃশ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও, এটি নিয়ে বিশেষ চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (ICMR) বিজ্ঞানী ড. রমন গঙ্গাখেড়কর। তাঁর মতে, এই ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশনের প্রমাণ পাওয়া না গেলে এটি মহামারির আকার ধারণ করবে না।
কী এই HMPV ভাইরাস?
এই ভাইরাসের নাম হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV)। এটি মূলত সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা বা দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণ সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ২-৫ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলি সেরে যায়।
শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যদিও আক্রান্তদের একটি ক্ষুদ্র অংশ (৫-১৬ শতাংশ) নিউমোনিয়ার মতো তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে ভুগতে পারে, তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি মৃদু উপসর্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ড. গঙ্গাখেড়কর বলেছেন, “HMPV বহু বছর ধরে বিদ্যমান। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা এ বা H1N1-এর মতো ভাইরাস বেশি প্রাণঘাতী হওয়ায় সেগুলিকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই ভাইরাস মূলত শিশু বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের ক্ষতি করতে পারে, তাও বিরল ক্ষেত্রে।”

ভারতীয়দের জন্য ঝুঁকি কতটা?
ভারতে এই ভাইরাস নিয়ে বিশেষ উদ্বেগের কারণ নেই। ড. গঙ্গাখেড়কর জানিয়েছেন, ভারতের ৪ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষের শরীরে ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি রয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে, ভারতীয় জনগণ এই সংক্রমণের সঙ্গে বারবার পরিচিত হয়েছে এবং এটি সাধারণ ফ্লুর মতোই ছড়ায়।
HMPV-এর লক্ষণ
HMPV ভাইরাসের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
সর্দি
কাশি
জ্বর
শ্বাসকষ্ট
কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় পরিণত হতে পারে। তবে শ্বাসযন্ত্রের রোগ যেমন অ্যাজমা বা সিওপিডি থাকলেও, এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সির গঙ্গারাম হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ড. সুরেশ গুপ্ত বলেছেন, “এই ভাইরাস নতুন নয়, এটি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচিত। এটি শীতকালে সাধারণ ফ্লুর মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসাতেই সেরে যায়। খুব কম ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।”

HMPV Virus
সতর্কতা ও সুরক্ষা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখলে এবং শিশুদের সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখলে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
সুতরাং, এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং, সচেতনতা ও সঠিক সুরক্ষাই হবে এর থেকে নিজেকে এবং প্রিয়জনদের সুরক্ষিত রাখার চাবিকাঠি।