Kumortuli Ghat Muder :শীতের সকাল, কুয়াশায় ঢাকা কলকাতার আকাশ। এমনই এক সকালে উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি ঘাটে ঘটে যায় এক হাড়হিম করা ঘটনা। ট্রলিব্যাগে ভরা এক দেহ গঙ্গায় ফেলার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েন দুই মহিলা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওই ব্যাগে কার দেহ ছিল? কেনই বা এই নৃশংস ঘটনা? মা-মেয়ের স্বীকারোক্তিতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
কুমোরটুলি ঘাটের( Kumortuli Ghat Muder )হাড়হিম করা ঘটনার সারসংক্ষেপ
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
ঘটনার স্থান | উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি ঘাট |
সময় | শীতের সকাল, সাতটা নাগাদ |
ঘটনার সারমর্ম | দুই মহিলা ট্রলিব্যাগে একটি টুকরো টুকরো করা দেহ গঙ্গায় ফেলার চেষ্টা করেন |
ধৃত ব্যক্তি | ফাল্গুনী ঘোষ ও তাঁর মা আরতি ঘোষ |
দেহের পরিচয় | ফাল্গুনীর পিসি শাশুড়ি সুমিতা ঘোষ |
হত্যার কারণ | পারিবারিক বিবাদ |
পুলিশের তদন্ত | ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায়, খুনের সঠিক কারণ অনুসন্ধান চলছে |
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া | মহিলাদের অস্বস্তিকর আচরণ ও ভারী ব্যাগ দেখে সন্দেহ হয় |

Kumortuli Ghat Muder
সকাল সাতটার হাড়হিম করা দৃশ্য
মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ কুমোরটুলি ঘাটে একটি ট্যাক্সি থেকে নামেন মাস্ক পরা দুই মহিলা। তাঁদের হাতে একটি ভারী ট্রলিব্যাগ। ব্যাগটি টানতে কষ্ট হচ্ছিল দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। মহিলারা দাবি করেন, ব্যাগে তাদের পোষ্য কুকুরের মৃতদেহ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের কথায় বিশ্বাস করেননি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় উত্তর বন্দর থানার পুলিশ।
ট্রলিব্যাগ খোলার পরই সবাই আঁতকে ওঠেন। ভিতরে পাওয়া যায় এক মহিলার পচাগলা রক্তাক্ত দেহ। দেহটি টুকরো টুকরো করা অবস্থায় ছিল। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এটি একটি খুনের ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন উঠল, দেহ কার? কেনই বা এই নৃশংসতা?
মা-মেয়ের স্বীকারোক্তি
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়া দুই মহিলার পরিচয় জানা যায়। তাঁরা হলেন ফাল্গুনী ঘোষ এবং তাঁর মা আরতি ঘোষ। ফাল্গুনী জানান, ট্রলিব্যাগে থাকা দেহটি তাঁর পিসি শাশুড়ি সুমিতা ঘোষের। গত রাতে মধ্যমগ্রামের বাড়িতে মা-মেয়ের সঙ্গে সুমিতার বিবাদ হয়। সেই বিবাদের জেরে ভারী কিছু দিয়ে সুমিতার মাথায় আঘাত করা হয়। এই আঘাতেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফাল্গুনী এবং আরতি জানান, সুমিতার দেহ ট্রলিব্যাগে ভরে তারা মধ্যমগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। এরপর কুমোরটুলি ঘাটে এসে দেহ গঙ্গায় ফেলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের সন্দেহের কারণে তারা ধরা পড়েন।
পুলিশের তদন্তে নতুন তথ্য
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃত মা-মেয়ের কাছ থেকে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার কাজিপাড়া স্টেশনের টিকিট পাওয়া গিয়েছে। বারাসাতের কাছে কাজিপাড়া থেকেই তারা কলকাতায় এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, মহিলারা এর আগেও প্রিন্সেপ ঘাট এবং মধ্যমগ্রামে দেহ ফেলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, মহিলারা প্রথমে দাবি করেছিলেন যে ব্যাগে কুকুরের দেহ রয়েছে। কিন্তু তাদের অস্বস্তিকর আচরণ এবং ভারী ব্যাগের কারণে সন্দেহ হয়। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “মহিলারা খুবই অস্বস্তিতে ছিলেন। তাদের কথাবার্তায় গলদ ছিল। আমরা সন্দেহ করেই পুলিশকে খবর দিই।”

খুনের কারণ কী?
পুলিশ এখনও খুনের সঠিক কারণ জানতে পারেনি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক বিবাদই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ। সুমিতা ঘোষের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ আশা করছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে আরও তথ্য জানা যাবে।
শেষ কথা
কুমোরটুলি ঘাটের এই ঘটনা কলকাতাবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। পারিবারিক বিবাদ কীভাবে এতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের তদন্ত চলছে, এবং আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই এই রহস্যের সমাধান হবে। তবে এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও তুলে ধরেছে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্র।
শীতের এই সকালে কুমোরটুলি ঘাটের হাড়হিম করা ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, অন্ধকার কতটা নিকটে থাকতে পারে। পুলিশের তদন্তের ফলাফলের জন্য সবাই অপেক্ষায়।