Manmohan Singh Death :ডঃ মনমোহন সিং, যিনি ভারতের ১৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪-এ দিল্লির এইমসে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯২ বছর বয়সী এই মহান ব্যক্তিত্ব বয়সজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সন্ধ্যা ৮:০৬-এ তাকে এইমসের মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু রাত ৯:৫১-এ চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
ডঃ মনমোহন সিং-এর জীবনাবসান
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-এর মৃত্যুতে গোটা দেশ শোকাহত। ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এ তার মৃত্যু হয়। বয়সজনিত শারীরিক সমস্যার কারণে হঠাৎ বাড়িতে তার জ্ঞান হারানোর পর সন্ধ্যা ৮:০৬ মিনিটে তাকে এইমসে নিয়ে আসা হয়।
এইমসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “গভীর শোকের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং, ৯২ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বয়সজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২৬ ডিসেম্বর বাড়িতে হঠাৎ জ্ঞান হারানোর পর তার চিকিৎসা শুরু হয়। তাকে এইমসের মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে আনা হয়, কিন্তু রাত ৯:৫১-এ চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”
এইমসের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে যে, “ডঃ মনমোহন সিং-এর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি ছিলেন দেশের একজন প্রাজ্ঞ নেতা এবং অর্থনীতির স্থপতি। তার মৃত্যুতে দেশ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।”
Manmohan Singh Death
শৈশব ও শিক্ষা
১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ মনমোহন সিং। অসাধারণ মেধাবী এই ছাত্র তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার জন্য ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাগত জীবন
ডঃ মনমোহন সিং প্রথমে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
ডঃ সিংয়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৯১ সালে, যখন তিনি পিভি নরসিমা রাও-এর মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এই সময়েই ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূচনা হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেয়। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং আর্থিক নীতি আজও স্মরণীয়।
Manmohan Singh Death
প্রধানমন্ত্রিত্ব
২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত, ডঃ মনমোহন সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ভারত শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। শান্ত, ধীরস্থির, এবং দৃঢ়চেতা এই নেতা দেশের উন্নয়নে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনেছিলেন।
ব্যক্তি ও পরিবার
ডঃ সিং ছিলেন এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব, যিনি সারাজীবন সরল জীবনযাপন করেছেন। তার স্ত্রী, গুরুশরণ কৌর, এবং তাদের তিন কন্যা তার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছিল।
অবসর জীবনে অবদান
২০২৪ সালে রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে অবসর নেওয়ার পরেও ডঃ সিং ভারতের আর্থ-সামাজিক বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করে গেছেন। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে প্রজন্মের জন্য শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে।
ডঃ মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী মোদীর শোকবার্তা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লেখেন, “ভারত আজ তার অন্যতম গুণী নেতাকে হারানোর শোক পালন করছে। বিনম্র সূচনা থেকে উঠে আসা ডঃ মনমোহন সিং একজন সম্মানিত অর্থনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে কাজ করেছেন এবং ভারতের অর্থনৈতিক নীতিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। সংসদে তার বক্তব্য সর্বদাই গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী ডঃ সিংয়ের সঙ্গে তার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতাও স্মরণ করেছেন, যখন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ডঃ মনমোহন সিং জি-এর সঙ্গে আমার নিয়মিত আলোচনা হত। প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা বিস্তৃত আলোচনা করতাম। তার জ্ঞান এবং বিনম্রতা সর্বদাই স্পষ্ট ছিল। এই শোকের মুহূর্তে ডঃ মনমোহন সিং জি-এর পরিবার, তার বন্ধুবান্ধব এবং অসংখ্য অনুরাগীর প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি।”
Manmohan Singh Death
উপসংহার
ডঃ মনমোহন সিং শুধু একজন রাজনীতিবিদ বা অর্থনীতিবিদ নন; তিনি ছিলেন ভারতীয় গণতন্ত্রের এক মহানায়ক। তার জীবন, কর্ম এবং দর্শন আজও কোটি কোটি ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ভারতের ইতিহাসে ডঃ সিংয়ের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।