Merchant Navy Officer Mudered by His Wife :মীরাটের এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্ত্রী ও তার প্রেমিকের হাতে প্রাণ হারালেন এক মার্চেন্ট নেভি অফিসার। ২৯ বছর বয়সী সৌরভ রাজপুতকে হত্যার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে একটি ড্রামে ভরে সিমেন্ট দিয়ে পুঁতে ফেলেছিল তার স্ত্রী মুসকান রাস্তোগি (২৭) এবং তার প্রেমিক সাহিল শুক্লা (২৭)। এই ঘটনায় ফাঁস হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা এবং নিষ্ঠুর নির্যাতনের এক করুণ কাহিনী।
সংক্ষিপ্ত সারাংশ টেবিল: মীরাটের নৃশংস হত্যাকাণ্ড(Merchant Navy Officer Mudered by His Wife)
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
ঘটনার স্থান | মীরাট, উত্তরপ্রদেশ |
হত্যাকাণ্ডের শিকার | সৌরভ রাজপুত (২৯), মার্চেন্ট নেভি অফিসার |
অভিযুক্ত | মুসকান রাস্তোগি (স্ত্রী, ২৭) এবং সাহিল শুক্লা (প্রেমিক, ২৭) |
হত্যার সময় | ৩ মার্চ, ২০২৪ |
হত্যার পদ্ধতি | ঘুমের ওষুধ দিয়ে অচেতন করে ছুরিকাঘাত |
দেহ গুম করার পদ্ধতি | দেহ টুকরো করে সিমেন্টে পুঁতে ফেলা |
পরিকল্পনার সময় | নভেম্বর ২০২৪ থেকে |
শিমলা ভ্রমণ | হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে গিয়ে শিমলায় অবস্থান এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি |
গ্রেফতার | ১৭ মার্চ, ২০২৪ |
মুভিটিভ | মাদকাসক্তি, প্রেমের সম্পর্ক এবং আর্থিক লোভ |

হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল নভেম্বর মাসে
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, মুসকান এবং সাহিল নভেম্বর মাস থেকেই সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল সৌরভকে তাদের জীবন থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছিল, যেখানে মৃত পশুদের দাফন করা হয়। তারা ভেবেছিল, সৌরভের দেহও এভাবেই তারা গুম করে ফেলতে পারবে।
ঘুমের ওষুধ দিয়ে অচেতন করে হত্যা
২২ ফেব্রুয়ারি মুসকান এক ডাক্তারের কাছে গিয়ে অবসাদে ভুগছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ করে ঘুমের ওষুধের প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করে। এরপর গুগলের সাহায্যে সে আরও কিছু শক্তিশালী সেডেটিভ ওষুধের নাম জেনে প্রেসক্রিপশনে যোগ করে। এই ওষুধ কিনে তারা সৌরভের খাবারে মিশিয়ে দেয়। ৩ মার্চ সৌরভ বাড়ি ফিরলে মুসকান তার মা রেনু তৈরি করা ‘লাউকি কে কফতে’ গরম করে তাতে ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সৌরভ অচেতন হয়ে পড়লে মুসকান সাহিলকে ফোন করে তাদের ইন্দিরা নগরের বাসায় ডেকে আনে। এরপর দুজনে মিলে ঘুমন্ত সৌরভের উপর ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে তাকে হত্যা করে।
দেহ টুকরো টুকরো করে সিমেন্টে পুঁতে ফেলা
সৌরভকে হত্যার পর সাহিল তার মাথা এবং হাত কেটে আলাদা করে ফেলে। তাদের পরিকল্পনা ছিল দেহের টুকরোগুলো পলিথিন ব্যাগে ভরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু পরে তারা তাদের পরিকল্পনা বদলে ফেলে। তারা ঘন্টাঘর থেকে একটি বড় নীল রঙের ড্রাম এবং স্থানীয় বাজার থেকে সিমেন্ট কিনে আনে। সৌরভের দেহের টুকরোগুলো ড্রামে ভরে সিমেন্ট ও ধুলো দিয়ে সিল করে ফেলে। পুলিশের ধারণা, সিনেমায় দেখানো দেহ গুম করার পদ্ধতি থেকেই তারা এই ধারণা পেয়েছিল।

হত্যাকাণ্ডের পর শিমলা ভ্রমণের রহস্য
সৌরভ রাজপুতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর মুসকান রাস্তোগি এবং সাহিল শুক্লা শিমলায় পালিয়ে যায়। তাদের এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল হত্যাকাণ্ডের সন্দেহ এড়ানো এবং কিছুদিনের জন্য নিরাপদ স্থানে থাকা। শিমলায় থাকাকালীন তারা সৌরভের ফোন ব্যবহার করে তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ছবি আপলোড করে। এইভাবে তারা সৌরভের পরিবার এবং বন্ধুদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, যেন তারা মনে করে সৌরভ এখনও জীবিত এবং শিমলায় ভ্রমণ করছে।
তারা শিমলায় একটি হোটেলে অবস্থান করে এবং সাধারণ পর্যটকের মতো আচরণ করে। তাদের এই চালাকি বেশ কিছুদিন সফলভাবে কাজ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা ধরা পড়ে যায়। শিমলা থেকে ফিরে আসার পর তাদের বাসার মালিক এবং শ্রমিকরা সিমেন্টে পোঁতা ড্রামের দুর্গন্ধ পেলে পুলিশকে খবর দেয়। এরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়।
মুসকানের ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা
মুসকান রাস্তোগি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। ২০১৬ সালে সৌরভের সাথে প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় মুসকান। কিন্তু সময়ের সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে। সৌরভ তাদের সম্পর্ক ঠিক করতে চাইলেও মুসকান সাহিলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সাহিলের সাথে তার সম্পর্ক শুধু প্রেমেরই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সাহিল তাকে চরস ও স্ম্যাকের মতো মাদকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মুসকানের পরিবারের মতে, মাদকের প্রতি তার আসক্তি তাকে এই পথে নিয়ে গেছে।


সাহিলের বিকৃত মানসিকতা
সাহিল শুক্লার ঘরে অদ্ভুত চিত্রকর্ম দেখা গেছে, যেখানে একটি এলিয়েনের মুখ এবং “You cannot trip with us” লেখা রয়েছে। পুলিশের ধারণা, সাহিলের মনে ভূত-প্রেত সম্পর্কিত ভীতি কাজ করত, যা তার মাদক সেবনের কারণে আরও বেড়ে গিয়েছিল। মুসকান এই মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাহিলকে বোঝায় যে তার মৃত মায়ের আত্মা সৌরভের বলি চাইছে।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন
মুসকান এবং সাহিল সৌরভের দেহ সিমেন্টে পুঁতে ফেলার পর হিমাচল প্রদেশে পালিয়ে যায়। কিন্তু ১৭ মার্চ ফিরে এলে তাদের বাসার মালিক সন্দেহ করে এবং বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেয়। শ্রমিকরা ড্রামের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পেলে পুলিশকে খবর দেয়। মুসকান তার মায়ের কাছে স্বীকারোক্তি করে যে সে সৌরভের ৬ লক্ষ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। এই স্বীকারোক্তির পর পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
শেষ কথা
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করেনি, বরং সমাজের কাছে এক চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরণ হয়ে থাকবে। মুসকান এবং সাহিলের এই অপরাধ শুধু আইনের কাঠগড়ায় নয়, মানুষের মনেও এক গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানবিক সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
