Pahalgam Attack :২৩ এপ্রিল, ২০২৫। পশ্চিমবঙ্গের হৃদয়ে গভীর শোকের ছায়া। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হানায় প্রাণ হারালেন কলকাতার দুই তরুণ পর্যটক—সমীর গুহ এবং বিতান অধিকারী। বুধবার সন্ধ্যাবেলায় তাঁদের কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছয় দমদম বিমানবন্দরে। একই ঘটনায় শহীদ হয়েছেন পুরুলিয়ার মনোরঞ্জন মিশ্রও, যাঁর দেহ ফিরবে রাঁচী হয়ে।
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানায় শহীদ দুই বাঙালি সারসংক্ষেপ টেবিল (Pahalgam Attack )
বিষয় | তথ্য |
---|---|
হামলার স্থান | কাশ্মীর, পহেলগাঁও (বৈসরন উপত্যকা)(Pahalgam Attack) |
হামলার তারিখ | ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ |
মৃতের সংখ্যা (বাঙালি) | ৩ জন (সমীর গুহ, বিতান অধিকারী, মণীশরঞ্জন মিশ্র) |
মূলত কোথা থেকে | কলকাতা (বেহালা ও পাটুলি), পুরুলিয়া |
কার্যকাল | সমীর ও মণীশ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী, বিতান থাকতেন ফ্লোরিডায় |
পরিবারের অবস্থা | স্ত্রী ও শিশু সন্তানের সামনে খুন, পরিবার শোকস্তব্ধ |
সরকারি প্রতিক্রিয়া | মুখ্যমন্ত্রীর সান্ত্বনা, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ |

ভ্রমণের আনন্দ, মৃত্যুতে রূপান্তর
বেহালার সখেরবাজারের সমীর গুহ কাশ্মীর গিয়েছিলেন পরিবার নিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ছিলেন তিনি। ফিরে আসার কথা ছিল মঙ্গলবার, কিন্তু ফিরলেন কফিনে বন্দি হয়ে। স্ত্রী শবরী গুহ কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, “যে মানুষটা সঙ্গে ছিল, তাকে তো আর ফিরে পাব না।”
অন্যদিকে, পাটুলির বৈষ্ণবঘাটা এলাকার বিতান অধিকারী কর্মসূত্রে থাকতেন আমেরিকার ফ্লোরিডায়। স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। মঙ্গলবার দুপুরে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিকেলেই বৈসরন উপত্যকায় তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জঙ্গিদের গুলি। সবার সামনে, সন্তানকে কোলে নিয়েই মৃত্যু দেখে ফেললেন সোহিনী অধিকারী। সন্তানকে দেখিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠলেন, “ওর চোখের সামনেই ওর বাবাকে মেরে দিল।”
পুরুলিয়ার মণীশরঞ্জনের মৃত্যুও স্তব্ধ করে দিয়েছে রাজ্যকে
আইবি-তে কর্মরত মণীশরঞ্জন মিশ্র ছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা। সম্প্রতি হায়দরাবাদে বদলি হয়ে যান এবং ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন পরিবার নিয়ে। পহেলগাঁওয়ে তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ
পাহাড়ের এই রক্তক্ষয়ী ঘটনার জেরে জারি হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এবং সরাসরি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জম্মু-কাশ্মীর ‘স্বাভাবিক’ বলে দাবি করেছিল কেন্দ্র। আজকের এই ঘটনা কি সেটাই প্রমাণ করে?”
মানবিক বিপর্যয়ের মুখে একটাই প্রশ্ন—এই সুরক্ষা কোথায়?
এই ঘটনায় রাজ্যের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, ক্ষোভ এবং গভীর বেদনা। ভ্রমণপ্রেমী মানুষ এখন চিন্তিত—কাশ্মীর কি আর নিরাপদ? কেন্দ্রীয় সরকার কোথায় ব্যর্থ হল?
শেষ কথা
জঙ্গি হামলায় প্রিয়জন হারানোর শোক ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একটি পরিবার শুধু তার একজন সদস্য নয়, তার ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন, হাসি হারিয়েছে। আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি—এই মৃত্যু যেন আর না হয়। প্রশাসন এবং কেন্দ্র যেন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, যাতে আর কোনো শিশু বাবাকে হারায় না, আর কোনো স্ত্রীকে বলতে না হয়, “আমি কীভাবে বাঁচব?”