Ratan Tata Passed Away :রাতন টাটা, ভারতের অন্যতম বৃহৎ কনগ্লোমারেট টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমিরেটাস, ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। এই বিশিষ্ট শিল্পপতি মাত্র সোমবারই সামাজিক মাধ্যমে তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, এবং জানিয়েছিলেন যে তিনি কেবলমাত্র বয়সজনিত রুটিন মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য যাচ্ছেন।
রতন টাটা (Ratan Tata) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় শিল্পপতি, যিনি টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাভাল টাটা এবং মাতা সুনু টাটা। রতন টাটা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ১৯৬১ সালে টাটা গ্রুপে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি টাটা গ্রুপকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেন এবং টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, টাটা মোটরস এবং টাটা স্টিলের মতো সংস্থাগুলির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ নানা সামাজিক ও দাতব্য কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করেছে।
Ratan Tata Passed Away
মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে বুধবার ষষ্ঠীর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতীয় শিল্প জগতের কিংবদন্তি রতন টাটা। গত সোমবার ভোরে বয়সজনিত কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাকে হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেন। প্রথমে তার অবস্থার উন্নতির আশ্বাস থাকলেও ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (ICU) স্থানান্তর করা হয়। সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও, রাতের শেষ প্রহরে এই মহান শিল্পপতির জীবনাবসান ঘটে।
রতন টাটার (Ratan Tata) মৃত্যুতে ভারত তথা বিশ্বের শিল্প জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি শুধুমাত্র একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন না, বরং একজন মানবিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার কাজ ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে বহু মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।
বুধবার গভীর রাতে, টাটা সন্সের বর্তমান চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন একটি বিবৃতিতে রাতন টাটার মৃত্যু সংবাদ দেন। তিনি রাতন টাটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “রাতন নাভাল টাটার প্রস্থান আমাদের জন্য একটি গভীর ক্ষতি। তিনি শুধু টাটা গ্রুপকেই নয়, সমগ্র জাতিরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন।”
টাটা গ্রুপের প্রতি রাতন টাটার (Ratan Tata) অবদান প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখরন বলেন, “তিনি শুধুমাত্র একজন চেয়ারম্যান ছিলেন না। আমার জন্য তিনি একজন মেন্টর, গাইড এবং বন্ধু ছিলেন। তার উদাহরণ দিয়ে তিনি আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করতেন। টাটা গ্রুপ তার নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হয়, কিন্তু তিনি কখনোই নৈতিকতার দিক থেকে সরে যাননি।”
ফিলানথ্রপিতে রাতন টাটার অবদান স্মরণ করে চন্দ্রশেখরন আরও বলেন, “শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যসেবা, তার উদ্যোগগুলি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী প্রভাব রেখে যাবে।”
রাতন টাটার (Ratan Tata) মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরেই শিল্পমহল ও অন্যান্য জায়গা থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি আসতে শুরু করে:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই শিল্পপতিকে “সহানুভূতিশীল আত্মা এবং অসাধারণ মানবসত্তা” বলে অভিহিত করে বলেন, “শ্রী রাতন টাটা জি ছিলেন একজন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবসায়িক নেতা, সহানুভূতিশীল মানুষ এবং ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের সবচেয়ে পুরনো এবং সম্মানিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে স্থিতিশীল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অবদান কেবল বোর্ডরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার বিনয়, দয়া এবং সমাজকে উন্নত করার অটুট প্রতিজ্ঞার জন্য তিনি বহু মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।”
Ratan Tata Passed Away
গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই রাতন টাটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “তিনি ভারতের আধুনিক ব্যবসায়িক নেতৃত্বকে মেন্টর হিসেবে সাহায্য করেছেন এবং তার অসাধারণ ব্যবসায়িক ও ফিলানথ্রপিক অবদান রেখে গেছেন।”
রাতন টাটা (Ratan Tata) ১৯৯১ সালে $১০০ বিলিয়ন ডলারের ইস্পাত থেকে সফটওয়্যার পর্যন্ত বিস্তৃত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তিনি ১৯৯৬ সালে টাটা টেলিসার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৪ সালে আইটি কোম্পানি টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসকে পাবলিক করেন। ২০০৮ সালে, টাটা গ্রুপের অধীনে বিশ্বে সবচেয়ে সস্তা গাড়ি ‘টাটা ন্যানো’ তৈরি করা হয়, যার মূল্য ছিল মাত্র ₹১ লাখ। এই গাড়ি মধ্যবিত্তের জন্য একটি প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
রাতন টাটা ১৯৯১ থেকে ২০১২ এবং ২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দুবার টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। তবে তিনি টাটা গ্রুপের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে সরে যাওয়ার পরেও টাটা ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে অবদান রেখে গেছেন।
Ratan Tata Passed Away
রাতন টাটার (Ratan Tata) মৃত্যুতে আরও একটি অমীমাংসিত অধ্যায় থেকে গেছে। ২০২২ সালে সাইরাস মিস্ত্রি, যিনি রাতন টাটার পর টাটা সন্সের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। রাতন টাটা এবং সাইরাস মিস্ত্রির মধ্যে ব্যবসায়িক বিরোধ মিটমাট হয়নি।
প্রথম জীবনে, রাতন টাটা স্থাপত্যে পড়াশোনা করেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এরপর হার্ভার্ডে একটি ম্যানেজমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। তার কর্মজীবনে অবদান রাখার জন্য তিনি ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০০ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন।
রাতন টাটার (Ratan Tata) মৃত্যুতে ভারতের শিল্প এবং সমাজের প্রতি তার অবদানকে স্মরণ করা হবে, এবং তার নাম আগামী বহু প্রজন্মের মনে গেঁথে থাকবে । উদ্ভাবন ও মানবতার পথপ্রদর্শক, যাঁর ছায়া থাকবে অনন্তকাল।