Ratha Yatra :রথযাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন উৎসবগুলির মধ্যে একটি। এই উৎসব কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও এক অনন্য নিদর্শন। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটে। রথের চাকার গড়িয়ে চলা, ভক্তদের জয়ধ্বনি এবং প্রসাদের মিষ্টি সুবাস—সব মিলিয়ে রথযাত্রা এক অপূর্ব অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে।
রথযাত্রার সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ (Ratha Yatra) :
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
উৎসবের নাম | রথযাত্রা |
ধর্মীয় গুরুত্ব | জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথযাত্রা |
প্রধান স্থান | পুরী (ওড়িশা), পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ |
তারিখ | আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি |
রথের সংখ্যা | ৩ টি (জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা) |
মূল অনুষ্ঠান | রথ টেনে গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া ও ফিরে আসা (উল্টো রথ) |
বিশেষ প্রসাদ | মহাপ্রসাদ (পুরীর জগন্নাথ মন্দির) |
সামাজিক তাৎপর্য | ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ ও ঐক্য |

রথযাত্রা কেন পালন করা হয়?
রথযাত্রা হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা প্রধানত জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথযাত্রা হিসেবে পালিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্র হলো পুরী (ওড়িশা), তবে এটি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। রথযাত্রার পিছনে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী ও ধর্মীয় বিশ্বাস।
রথযাত্রার ইতিহাস
রথযাত্রার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। পুরাণ অনুসারে, এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল দ্বাপর যুগে, যখন শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মথুরা থেকে দ্বারকায় ফিরে আসেন। কিছু মতে, রথযাত্রার সূত্রপাত হয়েছিল রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সময়ে, যিনি পুরীতে জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা বিশ্ববিখ্যাত। এখানে তিনটি বিশাল রথ তৈরি করা হয়:
- জগন্নাথের রথ (নন্দীঘোষ) – ৪৫ ফুট উচ্চতা, ১৬ চাকা
- বলরামের রথ (তালধ্বজ) – ৪৪ ফুট উচ্চতা, ১৪ চাকা
- সুভদ্রার রথ (দর্পদলন) – ৪৩ ফুট উচ্চতা, ১২ চাকা
প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষাধিক ভক্ত রথ টেনে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যান, যা তাদের মাসির বাড়ি হিসেবে পরিচিত। সেখানে সাত দিন অবস্থানের পর আবার ফিরে আসেন মূল মন্দিরে, যা উল্টো রথ নামে পরিচিত।

রথযাত্রার ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য
রথযাত্রা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক ঐক্য ও ভক্তিরও প্রতীক। বিভিন্ন স্থানে রথ টানার সময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, রথযাত্রায় অংশ নিয়ে রথ স্পর্শ করলে মোক্ষ লাভ হয়।
রথযাত্রার বৈশিষ্ট্য
- রথ নির্মাণ: রথগুলি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় এবং সেগুলি রঙিন কাপড় ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
- প্রসাদ: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ (মহাপ্রসাদ) অত্যন্ত বিখ্যাত, যা ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
- সংস্কৃতি ও উৎসব: রথযাত্রার সময় নাচ, গান, ভক্তিমূলক সঙ্গীত ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উপসংহার
রথযাত্রা হিন্দু সংস্কৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা ভক্তি, ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং মানবতার মিলনমেলাও বটে।
