Shikhar Dhawan Retirement :ভারতের তারকা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের হয়ে খেলার পর, ধাওয়ান তার দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন। ধাওয়ান ভারতের হয়ে ৩৪টি টেস্ট, ১৬৭টি ওডিআই এবং ৬৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তিনি যথাক্রমে ২,৩১৫, ৬,৭৯৩ এবং ১,৫৭৯ রান সংগ্রহ করেছেন।
শিখর ধাওয়ানের (Shikhar Dhawan Retirement) ক্রিকেট ক্যারিয়ার: সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান
বিভাগ | পরিসংখ্যান |
---|---|
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার (সর্বমোট) | ১৩ বছর |
টেস্ট ম্যাচ | ৩৪ ম্যাচ, ২,৩১৫ রান |
ওডিআই ম্যাচ | ১৬৭ ম্যাচ, ৬,৭৯৩ রান |
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ | ৬৮ ম্যাচ, ১,৫৭৯ রান |
আইপিএল ম্যাচ | ২২২ ম্যাচ, ৬,৭৬৯ রান |
শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ | ২০২২, বাংলাদেশ (ওডিআই) |
শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ | ২০২১, শ্রীলঙ্কা |
অবসরের ঘোষণা | আগস্ট ২৬, ২০২৪ |
অধিনায়কত্বে জয়-পরাজয় রেকর্ড (ভারত) | ৮-৫ (ওডিআই), ২-১ (টি-টোয়েন্টি) |
অধিনায়কত্বে জয়-পরাজয় রেকর্ড (আইপিএল) | ১৩-২০ |
অবসর ঘোষণার ভিডিওতে ধাওয়ান বলেন, “জীবনের গল্পে এগিয়ে যেতে পৃষ্ঠা উল্টানো গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমি আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করছি। আমি নিজেকে বলেছি, ভারতীয় দলের হয়ে আর খেলতে না পারার জন্য দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই, বরং আমি গর্বিত যে আমি দেশের হয়ে খেলতে পেরেছি।”

Shikhar Dhawan Retirement
৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে। তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। টেস্ট ফরম্যাটে তিনি শেষবার খেলেছেন ২০১৮ সালে। ধাওয়ানের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ছিল আইপিএল ২০২৪-এ পাঞ্জাব কিংসের হয়ে, যেখানে তিনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে খেলেছিলেন। এরপর একটি চোটের কারণে তার মৌসুমটি আগেভাগেই শেষ হয়ে যায়।
ধাওয়ান (Shikhar Dhawan Retirement) তার দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পরিবার, ভক্ত, শৈশবের কোচ, এবং ভারত ও আইপিএল-এর বিভিন্ন দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ধাওয়ান ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনটি সেঞ্চুরি করে সবার নজরে আসেন। ওই টুর্নামেন্টে তিনি ৫০৫ রান করেছিলেন। বীরেন্দ্র শেহওয়াগ এবং গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে দিল্লির শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের অংশ ছিলেন ধাওয়ান। তার করতালি জাগানো কাভার ড্রাইভ ও কাট শটের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআই ফরম্যাটে ভারতের হয়ে অভিষেক ঘটে ধাওয়ানের, তবে সেই ম্যাচে তিনি শূন্য রানে আউট হন।
তবে ২০১৩ সালের মার্চে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে অভিষেকের সময় তিনি স্মরণীয় পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। সেই ম্যাচে তিনি মাত্র ৮৫ বলে দ্রুততম অভিষেক সেঞ্চুরি করেন। এরপর ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোহিত শর্মার সাথে শক্তিশালী ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়ে তিনি ভারতের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেবার তিনি ৩৬৩ রান করেন এবং দুটি সেঞ্চুরি হাঁকান।
ধাওয়ানের সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংসগুলির মধ্যে একটি ছিল ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩৭ রান। তিনি মরনে মরকেল, ডেল স্টেইন, ওয়েন পারনেল এবং ভার্নন ফিল্যান্ডারের মতো বোলারদের ধ্বংস করে দেন। আইসিসি টুর্নামেন্টগুলিতে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেও, আঙুলে ফাটল ধরে তার টুর্নামেন্টটি শেষ হয়ে যায়।

Shikhar Dhawan Retirement
ধাওয়ান আইপিএলে ২২২ ম্যাচ খেলে ৬,৭৬৯ রান সংগ্রহ করেছেন এবং ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে শিরোপা জিতেছেন। সেই সময়ে ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে তার পার্টনারশিপ ছিল দুর্দান্ত। তবে দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ কমতে থাকে।
ধাওয়ান ভারতীয় দলের অধিনায়কত্বও করেছেন ১২টি ওডিআই এবং ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে, যেখানে তার জয়ের রেকর্ড ৮-৫। এছাড়াও, তিনি আইপিএলে পাঞ্জাব কিংস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ৩৩টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন।
ধাওয়ানের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল ২০১০ সালে, যখন তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশাখাপত্তনমে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামেন। তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচও ছিল একটি ৫০ ওভারের ম্যাচ, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
অবসর ঘোষণার সময় ধাওয়ান লেখেন, “আমার ক্রিকেটীয় যাত্রার এই অধ্যায়টি বন্ধ করতে গিয়ে আমি অসংখ্য স্মৃতি এবং কৃতজ্ঞতা বহন করে চলেছি। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ! জয় হিন্দ!”
ভিরাট কোহলি এক্স-এ ধাওয়ানকে সম্মান জানিয়ে লেখেন, “শিখর @SDhawan25 তোমার সাহসী অভিষেক থেকে শুরু করে ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ওপেনার হওয়া পর্যন্ত তুমি আমাদের অগণিত স্মৃতি উপহার দিয়েছ। তোমার খেলার প্রতি ভালোবাসা, খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব এবং সেই অনন্য হাসি আমরা মিস করবো, কিন্তু তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি চিরকাল থাকবে। তোমার নতুন অধ্যায়ে শুভকামনা রইল, গব্বর!”