Shubhanshu Shukla :গ্রুপ ক্যাপ্টেন, শুভাংশু শুক্লা, মহাকাশে ভারতের নতুন ইতিহাসের স্রষ্টা ! কে এই শুভাংশু শুক্লা ?ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের নাম গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। ২০২৫ সালের ২৫ জুন, তিনি অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পা রাখেন, যেখানে তিনি ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। ৪১ বছর পর কোনো ভারতীয়ের মহাকাশযাত্রার এই ঘটনা গোটা দেশকে গর্বিত করেছে।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল তথ্যপঞ্জি সংক্ষিপ্ত (Shubhanshu Shukla) :
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
পূর্ণ নাম | গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা |
জন্মস্থান | লক্ষ্মৌ, উত্তরপ্রদেশ |
শিক্ষা | সিটি মন্টেসরি স্কুল, লক্ষ্মৌ; ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি |
পেশা | ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসার, মহাকাশচারী |
ঐতিহাসিক মিশন | অ্যাক্সিয়ম-৪ (২০২৫), আইএসএস-এ প্রথম ভারতীয় নাগরিক |
গবেষণার ক্ষেত্র | মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে মেথি-মুগের অঙ্কুরোদগম, ডায়াবেটিস গবেষণা |
মিশন স্থায়িত্ব | ১৪ দিন |
পরিবার | স্ত্রী কমনা ও পুত্র কিয়াশ |
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য | ৪১ বছর পর মহাকাশে ভারতীয় নাগরিকের পদার্পণ |

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
শুভাংশু শুক্লার জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্মৌতে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় সিটি মন্টেসরি স্কুল (সিএমএস) থেকে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। স্কুলের শিক্ষকরা তাঁকে একজন মেধাবী ও কৌতূহলী শিক্ষার্থী হিসেবে স্মরণ করেন।
তাঁর বাবা শম্ভু দয়াল শুক্লা স্মরণ করেন কীভাবে এক বন্ধুর অনুরোধে শুভাংশু এনডিএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কমিশন পাওয়ার পর ২,০০০ ঘণ্টারও বেশি ফ্লাইং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এই দক্ষ ফাইটার পাইলট।
ব্যক্তিগত জীবন: স্কুলের প্রেম থেকে সুখী দাম্পত্য
শুক্লার প্রেমের গল্পটিও স্বপ্নিল। তৃতীয় শ্রেণী থেকেই একই স্কুলে পড়তেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী কমনা শুক্লা (পেশায় ডেন্টিস্ট)। কমনা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন: “তাকে গুঞ্জন নামে চিনতাম, আজ সে কোটি ভারতীয়ের অনুপ্রেরণা”। তাদের ছয় বছরের পুত্র কিয়াশ এই সাফল্যে অংশীদার।
সামরিক জীবন ও মহাকাশযাত্রার প্রস্তুতি
২০০২ সালে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি (এনডিএ) থেকে স্নাতক হন এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। একজন দক্ষ ফাইটার পাইলট হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। পরবর্তীতে, তিনি ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) ও নাসার সঙ্গে যৌথ গবেষণায় অংশ নেন।
অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশন: একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত
২০২৫ সালের জুন মাসে, শুক্লা নাসার ফ্লোরিডা স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন-৯ রকেটে করে আইএসএস-এর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই মিশনে তিনি মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে মেথি ও মুং ডালের অঙ্কুরোদগম নিয়ে গবেষণা করেন, যা ভবিষ্যতে মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি মানব বসতি স্থাপনে সহায়ক হবে। এছাড়াও, তিনি ডায়াবেটিস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।

ব্যক্তিগত জীবন
শুভাংশু শুক্লা তাঁর সহধর্মিণী কমনা এবং ছেলে কিয়াশের সঙ্গে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করেন। তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা তাঁকে একজন অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভারতের জন্য অনুপ্রেরণা
গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা শুধু একজন মহাকাশচারী নন, তিনি ভারতের যুব প্রজন্মের জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তাঁর এই সাফল্য প্রমাণ করে যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
ভারতের জন্য গর্বের মুহূর্ত
শুক্লার এই সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, গোটা দেশের জন্য গর্বের বিষয়। তাঁর বাবা-মা, স্কুল, শহর লক্ষ্মৌ – সবাই এই সাফল্য উদ্যাপন করছে। ৫-৮ মিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক এই মহাকাশচারী প্রমাণ করেছেন যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে সবকিছু সম্ভব।
শেষ কথা
“মহাকাশ শুধু একটি গন্তব্য নয়, এটি মানুষের অগ্রযাত্রার প্রতীক” — শুভাংশু শুক্লার এই উক্তি যেন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যতের দিশা দেখাচ্ছে। তাঁর এই যাত্রা কেবল একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, গোটা দেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।