South Africa won WTC Final :লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে শনিবার (14/06/2025) এক অনন্য ইতিহাস রচনা করল দক্ষিণ আফ্রিকা। এডেন মার্করামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভর করে তারা ২৮২ রানের টার্গেট তাড়া করে ৫ উইকেটে জয় লাভ করে। এই জয় শুধু একটি ম্যাচজয় নয়, ২৭ বছরের অপেক্ষার পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম আইসিসি শিরোপা জয় — যা কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী দক্ষিণ আফ্রিকানদের গর্বিত করেছে।
সংক্ষিপ্ত সারাংশ টেবিল (South Africa won WTC Final):
বিষয় | তথ্য |
---|---|
ম্যাচ | বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ২০২৫ |
স্থান | লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, লন্ডন |
ফলাফল | দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়লাভ করে |
জয়ের লক্ষ্য | ২৮২ রান |
সেরা খেলোয়াড় | এডেন মার্করাম – ১৩৬ (২০৭ বল) |
অধিনায়ক | তেম্বা বাভুমা (দ. আফ্রিকা) |
উল্লেখযোগ্য বোলার | কাগিসো রাবাদা – ৯ উইকেট (৫+৪) |
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য | প্রথম ICC শিরোপা জয় ২৭ বছর পর |

মার্করামের মহাকাব্যিক ইনিংস
প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে যে ব্যাটিংটি করলেন এডেন মার্করাম, তা নিঃসন্দেহে টেস্ট ক্রিকেটের সোনালী অধ্যায়ের অংশ হয়ে থাকবে। ২০৭ বল মোকাবেলা করে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যেখানে ছিল ১৪টি চমৎকার বাউন্ডারি। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউডের বিপক্ষে এমন ব্যাটিং নিঃসন্দেহে অতুলনীয়।
শেষ দিনের নাটকীয়তা
চতুর্থ দিন শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে। আগের দিনের ২১৩/২ স্কোর থেকে তারা আর মাত্র ৬৯ রান দূরে ছিল। মার্করাম তখন ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন, সাথে ছিলেন অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। যদিও কামিন্সের দুর্দান্ত বলে বাভুমা ৬৬ রানে আউট হয়ে যান, এরপর ট্রিস্টান স্টাবসও স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। কিন্তু চাপ সামলে মার্করাম ও ডেভিড বেডিংহ্যামের পার্টনারশিপে আসে ম্যাচ জয়ের মূল ভিত।
মার্করাম যখন হ্যাজলউডের বলে আউট হন, দক্ষিণ আফ্রিকা তখন জয় থেকে মাত্র কয়েক রান দূরে। শেষ পর্যন্ত ৮৩.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছায় প্রোটিয়ারা।

অস্ট্রেলিয়ার লড়াই ও রাবাদার জাদু
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ২১২ রান করেছিল, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১৩৮ রানে অলআউট করে ৭৪ রানের লিড নেয়। কামিন্স নেন ৬ উইকেট, আর তার টেস্ট উইকেট সংখ্যা ৩০০ ছাড়ায়।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাগিসো রাবাদা ছিলেন অবিশ্বাস্য। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট সহ মোট ৯ উইকেট শিকার করেন তিনি।
বাভুমার নেতৃত্ব, এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি
৩৫ বছর বয়সী তেম্বা বাভুমা নিজের ক্যারিয়ারে বহুবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তবে এবার তিনি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখালেন। ইনজুরির মধ্যেও ৩৬ ও ৬৬ রানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। ম্যাচ শেষে বললেন, “আমাদের ফাইনালে পৌঁছানোর পথ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। এই জয়ের মাধ্যমে সব উত্তর দিয়ে দিয়েছি।”
মার্করাম ম্যান অফ দ্য ম্যাচ
ডাক পাওয়ার পর দুর্দান্ত এক ইনিংস, সাথে প্রথম ইনিংসে স্টিভ স্মিথের উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ উইকেটটিও। এমন পারফরম্যান্সের পর এডেন মার্করামের প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হওয়া নিঃসন্দেহে প্রাপ্য।

জয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা দক্ষিণ আফ্রিকা: লর্ডসে বাঁধভাঙা উদ্যাপন
দীর্ঘ ২৭ বছরের প্রতীক্ষা, বহুবার ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আর “চোকার্স” তকমা— সব কিছু পেছনে ফেলে অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা পেল তাদের কাঙ্ক্ষিত আইসিসি শিরোপা। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে দেখা গেল এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য— যেখানে উল্লাস, আনন্দাশ্রু আর গর্ব মিলেমিশে এক হয়ে গেল।
মাঠজুড়ে উল্লাস আর আবেগ
খেলা শেষ হতেই দক্ষিণ আফ্রিকার ডাগআউট থেকে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়েন সকল খেলোয়াড়। কেশব মহারাজ আবেগে চোখ মুছছিলেন, লুঙ্গি এনগিডি ও মার্কো জানসেন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন, যেন বছর ধরে জমে থাকা চাপ মুহূর্তেই মুক্তি পেল। কেউ হাঁটু গেড়ে বসে কেঁদে ফেললেন, কেউ দৌড়ে গ্যালারির দিকে ছুটলেন — এমন দৃশ্য আগে খুব কমই দেখা গেছে।
চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে বাভুমা
অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা যখন চ্যাম্পিয়নশিপের মেস (গদা) হাতে তুললেন, গোটা লর্ডস যেন কেঁপে উঠল করতালিতে। সেই মুহূর্ত ছিল গর্বের, ছিল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠার। ৩৫ বছর বয়সী এই নেতা যেভাবে দলকে একত্রিত রেখে জয় ছিনিয়ে এনেছেন, তা যুগে যুগে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ভক্তদের উচ্ছ্বাস
লর্ডসের গ্যালারিতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকদের উল্লাস যেন নিজের ঘরের মাঠেই খেলা হচ্ছিল এমন অনুভূতি তৈরি করেছিল। জাতীয় পতাকা হাতে, মুখে “প্রোটিয়া! প্রোটিয়া!” ধ্বনি — এই বিজয় শুধু খেলোয়াড়দের নয়, গোটা জাতির।

ড্রেসিংরুমের উদ্যাপন
ম্যাচ শেষের পর ড্রেসিংরুমে শুরু হয় আসল পার্টি। গান, নাচ, হাসি আর জয়ের চিৎকারে ভরে ওঠে চারপাশ। এডেন মার্করামের কাঁধে উঠে যায় গার্লিকনফেটি, আর কাগিসো রাবাদা সেলিব্রেশনের মাঝে পানির বোতল ছিটিয়ে দেন বাকিদের গায়ে।
‘চোকার্স’ থেকে ‘চ্যাম্পিয়ন’ পর্যন্ত যাত্রা
সত্যিই, এটি শুধুই একটি ট্রফি জয় নয়। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে নতুন অধ্যায়, যা আগামী প্রজন্মকে দেখাবে — বারবার ভেঙে পড়েও কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, বিশ্বাস রাখতে হয়, আর একদিন গর্ব করে বলতে হয়: “আমরাই চ্যাম্পিয়ন!”
শেষ কথা
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি শুধুই একটি ট্রফি জয় নয়, বরং দীর্ঘদিনের ব্যর্থতা ও “চোকার্স” তকমা থেকে মুক্তির প্রতীক। ক্রিকেট বিশ্বের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হল লর্ডস — যেখানে সবকিছু চুপ থাকলেও, দক্ষিণ আফ্রিকা গর্জে উঠেছে।