Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir :জম্মু-কাশ্মীরের রক্তঝরা ইতিহাস! পুলওয়ামা থেকে পাহালগাম কবে কবে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে,

Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir :জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি অত্যন্ত সুন্দর অঞ্চল, কিন্তু দশকের পর দশক ধরে এখানে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতা লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতের ইতিহাসে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা ও নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এই নিবন্ধে আমরা জম্মু ও কাশ্মীরে সংঘটিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী ঘটনা নিয়ে আলোচনা করব।

কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি হিংসার ইতিহাস: ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এক নজরে (Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir )

বছরপ্রধান ঘটনামোট প্রাণহানি (আনুমানিক)
১৯৮৯টিকা লাল টপলুর হত্যা
১৯৯০কাশ্মীরি হিন্দুদের গণপালায়ন ও বহু হত্যাকাণ্ড২২০+
১৯৯৮ওয়ান্ধামা, প্রাঙ্কোট সহ একাধিক গণহত্যা১২০+
২০০০চিট্টিসিংহপুরা ও অমরনাথ যাত্রায় হামলা১০০+
২০০২কালুচক হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক হত্যা৮০+
২০০৬ডোডা গণহত্যা, গ্রেনেড হামলা৭০+
২০১৬উরি ও পাঠানকোট হামলা৩৬
২০১৯পুলওয়ামা আত্মঘাতী হামলা৪১
২০২৩রাজৌরি ও পুঞ্চে ধারাবাহিক হামলা২০+
২০২৫পহেলগাম হামলায় ২৮ জন নিহত২৮
Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir
Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir

Read More :

Pahalgam Terrorist Attack, India on Pakistan:পাহলগাম হামলার জেরে উত্তপ্ত কাশ্মীর !পাকিস্তানি ভিসা বাতিল ঘোষণা, ভারতের কঠোর প্রতিক্রিয়া।

১৯৮৯: শুরু হলো সন্ত্রাসের কালো অধ্যায়

এই বছর বিজেপি নেতা ও আইনজীবী টিকা লাল টপলুকে জঙ্গিরা হত্যা করে। এটি ছিল কাশ্মীরে সংগঠিত প্রথম বড় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, যার পেছনে ছিল অ্যান্টি-পন্ডিত মিলিট্যান্টরা। একই বছরের ৪ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নীলকণ্ঠ গঞ্জুকে হত্যা করে জেকেএলএফ।

১৯৯০: কাশ্মীরি হিন্দুদের নির্বাসন ও রক্তপাতের বছর

এই বছরে ঘটেছিল একাধিক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড: ডূরদর্শনের পরিচালক লাসা কউল, কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুশির-উ-হক, লেখক সরবানান্দ কাউল প্রিমি ও তার পুত্র, এবং ইমাম মোহাম্মদ ফারুক শাহকে হত্যা করা হয়। পাশাপাশি এই বছরেই শুরু হয় কাশ্মীরি হিন্দুদের গণপালায়ন।

১৯৯৪–১৯৯৫: সেনাবাহিনী ও রাজনীতিবিদদের টার্গেট করে হামলা

১৯৯৪ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ই. ডব্লিউ. ফার্নান্দেজ সহ ১৫ জন সেনা অফিসার নিহত হন। ১৯৯৫ সালে রাজ্যের রাজ্যপাল লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে. ভি. কৃষ্ণ রাও-এর ওপর হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়।

১৯৯৮–১৯৯৯: একের পর এক গণহত্যা

ওয়ান্ধামা (২৩ নিহত), প্রাঙ্কোট (২৯), থুব (১৩), চাপনাড়ি (২৫), চম্বা (৩৫) সহ একাধিক হিন্দু গ্রামে নৃশংস হামলা চালানো হয়। এছাড়া আত্মঘাতী হামলায় বহু সেনা ও পুলিশ সদস্য নিহত হন।

২০০০: চিট্টিসিংহপুরা ও অমরনাথ হত্যাকাণ্ড

চিট্টিসিংহপুরায় ৩৫ জন শিখ হত্যার মাধ্যমে জাতিগত হিংসা বাড়ে। অমরনাথ যাত্রীদের ওপর হামলায় ৬২ জন নিহত হন।২০০১: বিধানসভা ও ধর্মীয় স্থানে হামলা

জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় গাড়িবোমা হামলায় ৩৬ জন নিহত হন। কোঠ চারওয়াল ও কিস্তওয়ারেও গণহত্যার ঘটনা ঘটে।

২০০২: কালুচক গণহত্যা ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড

কালুচকে সেনা পরিবারের ওপর হামলায় ৩১ জন নিহত হন। একই বছর আব্দুল ঘনি লোন, মুস্তাক লোন সহ একাধিক রাজনীতিক নিহত হন।

২০০৩: নদিমার্গ গণহত্যা ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড

নদিমার্গে ২৪ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বেশ কিছু রাজনীতিককেও হত্যা করা হয় এই বছর।

২০০৪–২০০৫: আত্মঘাতী হামলা ও রাস্তায় বিস্ফোরণ

জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কে একাধিক বিস্ফোরণ এবং রাজনৈতিক সভাগুলিতে হামলা দেখা যায়। রঘুনাথ মন্দিরে দ্বিতীয়বার হামলা হয়।

২০০৬: ডোডা হত্যাকাণ্ড ও ধারাবাহিক গ্রেনেড হামলা

ডোডায় ৫৭ জনকে হত্যা করে লস্কর-ই-তৈবা। এরপর একাধিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হন।

২০০৭–২০০৮: শ্রমিক ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা

এই দুই বছরে শ্রমিক, যাত্রীবাহী বাস, প্যারামিলিটারি ক্যাম্প ও রাজনৈতিক নেতা লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলা চলে।

২০০৯–২০১০: সীমিত হলেও ধারাবাহিক সহিংসতা

পুনছ, পুলওয়ামা ও শ্রীনগরে বিস্ফোরণ ও বন্দুকযুদ্ধে বেশ কিছু সেনা ও পুলিশ সদস্য নিহত হন।

২০১৩–২০১৪: সেনা কনভয় ও নির্বাচনের আগে হামলা

২০১৩ সালে শ্রীনগরে সেনা সদস্যদের ওপর হামলা ও ২০১৪ সালে নির্বাচন-পূর্ব হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হয়।

২০১৫–২০১৬: পঠানকোট ও উরি – কাশ্মীরে আবার উত্তেজনা

২০১৬ সালে পাঠানকোট ও উরিতে বড়সড় জঙ্গি হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হন। এসব ঘটনার দায় স্বীকার করে জইশ-ই-মোহাম্মদ।

২০১৭–২০১৮: নিরাপত্তা বাহিনী ও অমরনাথ যাত্রীদের লক্ষ্য করে হামলা

২০১৭ সালে অমরনাথ যাত্রীদের ওপর হামলায় ৮ জন নিহত হন। এছাড়া ব্যাঙ্ক ভ্যান, সেনা কনভয় ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর একাধিক হামলা হয়।

২০১৯: পুলওয়ামা – ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলা

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪১ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। জাতীয় নিরাপত্তার উপর বড় প্রভাব ফেলে এই ঘটনা।

২০২০–২০২১: রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং গ্রুপ গুলির উদ্ভব

এই বছরগুলোতে “দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট” এবং “পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট” নামে নতুন জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে এবং রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার দায় স্বীকার করে।

২০২২–২০২৩: আত্মঘাতী হামলা ও রাজৌরিতে নতুন করে উত্তেজনা

রাজৌরিতে একাধিক বোমা বিস্ফোরণ ও আত্মঘাতী হামলায় বহু সাধারণ মানুষ এবং নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন।

২০২৪: রেইসি ও কাথুয়ায় প্রাণঘাতী হামলা

রেইসিতে ৯ জুনে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট ৯ জনকে হত্যা করে। কাথুয়া ও শ্রীনগরের লালচকে গ্রেনেড হামলাও ঘটে।

২০২৫: পহেলগাম হত্যাকাণ্ড – একটি দুঃখজনক স্মৃতি

২২ এপ্রিল ২০২৫ সালে পহেলগামে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের হামলায় ২৮ জন নিহত হন। এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir
Timeline Terrorist Attack in Jammu Kasmir

উপসংহার

জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার শিকার। ভারত সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। তবে, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

এই তিন দশকের রক্তাক্ত ইতিহাস আমাদের শেখায়, জঙ্গি হিংসার বিরুদ্ধে সতর্কতা, সহমর্মিতা ও জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। শান্তি ফেরাতে কাশ্মীরবাসীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়ন কামনা করে আমরা এই নিবন্ধটি শেষ করছি।

Leave a comment