Why Puri Prasad Called Maha Prasad :জগন্নাথ প্রসাদকে ‘মহাপ্রসাদ’ বলা হয় কেন? পেছনের ইতিহাস জেনে নিন।

Why Puri Prasad Called Maha Prasad :ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুরী শহরে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থক্ষেত্রই নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এই মন্দিরে প্রতিদিন লক্ষাধিক ভক্ত ভোজন করেন একটি বিশেষ প্রসাদ—যা পরিচিত ‘মহাপ্রসাদ’ নামে।

জগন্নাথ ধামের প্রসাদ শুধু একটি খাদ্যই নয়, এটি ভক্তদের জন্য এক অলৌকিক অনুভূতি ও ঈশ্বরের কৃপার প্রতীক। এই প্রসাদকেমহাপ্রসাদ বলা হয়, কারণ এটি সাধারণ প্রসাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং পবিত্র। কিন্তু কেন এই নাম?

জগন্নাথ প্রসাদকে “মহাপ্রসাদ” বলার কারণ – সংক্ষিপ্ত সারনামা (Why Puri Prasad Called Maha Prasad):

বিষয়সংক্ষিপ্ত বিবরণ
পুরাণে উল্লেখস্কন্দপুরাণে জগন্নাথ প্রসাদের বিশেষত্ব বর্ণিত; শ্রীকৃষ্ণের ভোগের ঐতিহ্য বহন করে।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নজগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার পর দেবতার ভোগ হিসেবে প্রসাদের সূচনা, পবিত্র রীতিতে রান্না।
চৈতন্য মহাপ্রভুপ্রসাদের মহিমা প্রচার, এটিকে “প্রসাদের রাজা” আখ্যা দেন।
সম্রাট আকবরপ্রসাদ খেয়ে মুগ্ধ হয়ে মন্দিরকে সহায়তা করেন ও “মহাপ্রসাদ” নামে স্বীকৃতি দেন।
অলৌকিকতাপ্রসাদ কখনও নষ্ট হয় না, দরিদ্রকে অলৌকিকভাবে প্রসাদ দানের লোককথা প্রচলিত।
সামাজিক সমতাসব জাতি-ধর্মের মানুষ গ্রহণ করতে পারে, কোনো ভেদাভেদ নেই।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্যভক্তের পাপ মোচন করে, ঈশ্বরের কৃপার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
Why Puri Prasad Called Maha Prasad

Read More :

Ratha Yatra :রথযাত্রা কেন পালন করা হয় ? রথযাত্রার পেছনের ইতিহাস কি ?

রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্বপ্নাদেশ

পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে আছে যে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নে আদিষ্ট হন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর দেবতাদের ভোগের ব্যবস্থা শুরু হয়, যা অত্যন্ত পবিত্রভাবে রান্না করা হতো। এই ভোগই পরবর্তীতে “মহাপ্রসাদ” নামে খ্যাত হয়।

চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রচার

মধ্যযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু পুরীধামে এসে জগন্নাথের প্রসাদের মহিমা সারাবিশ্বে প্রচার করেন। তিনি এটিকে “প্রসাদের রাজা” বলে অভিহিত করতেন এবং বলতেন, এই প্রসাদে ভগবানের সরাসরি কৃপা থাকে। তাঁর হাত ধরে জগন্নাথ প্রসাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

সম্রাট আকবরের স্বীকৃতি

মুঘল সম্রাট আকবরও জগন্নাথের মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্য স্বীকার করেছিলেন। কথিত আছে, তিনি একবার পুরীর মন্দিরে এসে প্রসাদ খেয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি মন্দিরকে জমি ও অর্থদান করেছিলেন। তিনি এটিকে “মহাপ্রসাদ” নামে সম্মান জানান।

ব্রিটিশ আমলে প্রসাদের গুরুত্ব

ব্রিটিশ শাসনামলে অনেক বিদেশি পর্যটক ও প্রশাসক জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদের কথা লিখে গেছেন। তারা অবাক হতেন যে, এত বিপুল পরিমাণে প্রসাদ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও এটি কখনও নষ্ট হয় না। এই অলৌকিকতা আরও মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে যে এটি সাধারণ প্রসাদ নয়—এটি “মহাপ্রসাদ”।

লোককথা: মহাপ্রসাদের অলৌকিকতা

এক জনপ্রিয় লোককথা অনুসারে, একবার এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ জগন্নাথ মন্দিরে প্রসাদ চাইলেন, কিন্তু তখন প্রসাদ শেষ। তখনই মন্দিরের পাত্রে আবার প্রসাদ দেখা দিল! এই অলৌকিক ঘটনায় মানুষ বিশ্বাস করে যে, জগন্নাথের প্রসাদ কখনও ফুরায় না—এজন্যই এটি “মহাপ্রসাদ”।

পুরাণ ও স্কন্দপুরাণের উল্লেখ


স্কন্দপুরাণ ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে জগন্নাথের প্রসাদের বিশেষত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। কথিত আছে, মহাপ্রসাদের উৎপত্তি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময় থেকে। শ্রীকৃষ্ণ যখন দ্বারকায় থাকতেন, তখন তাঁর ভোগের খাবারকে “মহাভোগ” বলা হতো। পরবর্তীতে জগন্নাথ রূপে তাঁর প্রসাদও সেই মর্যাদা পায়।

Why Puri Prasad Called Maha Prasad

ইতিহাস ও উৎপত্তি:

পুরী জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিদিন পাঁচবার রান্না হয় ভগবানের জন্য। এই রান্না হয় ৫৬টি আইটেমের (ছপ্পান্ন ভোগ) বিশাল এক তালিকায়, মাটির হাঁড়িতে এবং কাঠের আগুনে। রান্নার পর এই খাবার প্রথমে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে নিবেদন করা হয়।

এই নিবেদনের পর যখন ভগবানের অর্ঘ্য রূপে এই ভোগ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, তখন তা শুধু “প্রসাদ” নয়—”মহাপ্রসাদ” নামে পরিচিত হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, ভগবান নিজে এই খাদ্য স্পর্শ করেন এবং তাঁর আশীর্বাদ মিশে যায় এতে।

ধর্মীয় তাৎপর্য:

  1. সার্বজনীনতা ও ভেদাভেদহীনতা:
    মহাপ্রসাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি জাতপাত, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই গ্রহণ করতে পারেন। পুরী মন্দিরের কাছে অন্নাচলা বাজারে মহাপ্রসাদ একত্রে খাওয়ার মাধ্যমে এই ভেদাভেদহীনতা প্রকাশ পায়।
  2. ‘নির্মল অন্ন’ হিসেবে গণ্য:
    হিন্দু ধর্মে প্রসাদের বিশুদ্ধতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহাপ্রসাদকে বলা হয় ‘নির্মল অন্ন’, কারণ ভগবানের সরাসরি কৃপা এতে বর্তমান।
  3. শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রদ্ধা:
    বৈষ্ণব ধর্মগুরু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিজেও মহাপ্রসাদকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতেন এবং প্রচার করতেন যে, এটি শুধু খাদ্য নয়, এটি ভগবানের স্বরূপ।

মহাপ্রসাদের প্রকারভেদ:

মহাপ্রসাদের দুটি প্রধান ধরন আছে—

সাংকুড়া (Sankudi): চাল, ডাল, তরকারি ইত্যাদি রান্না করা খাবার।

সুকিলা (Sukhila): শুকনো খাবার যেমন—খাই, নাড়ু, মিঠাই ইত্যাদি।

Why Puri Prasad Called Maha Prasad

আধ্যাত্মিক বিশ্বাস:

পুরাণ ও স্থানীয় লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই মহাপ্রসাদ গ্রহণ করলে মোক্ষ লাভ হয়। এমনকি মৃত্যুর পর দেহেও যদি মহাপ্রসাদ স্পর্শ করানো হয়, তবে আত্মার কল্যাণ হয় বলেও মনে করা হয়।

Why Puri Prasad Called Maha Prasad

উপসংহার

জগন্নাথের প্রসাদকে “মহাপ্রসাদ” বলার পেছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, পুরাণ, রাজন্যবর্গের সম্মান এবং ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস। এটি শুধু খাবার নয়—এটি ভগবানের অশেষ কৃপার প্রতীক। যুগ যুগ ধরে এই প্রসাদের মাহাত্ম্য মানুষকে আকর্ষণ করে চলেছে, এবং তা আজও অব্যাহত রয়েছে।

জয় জগন্নাথ! 🙏

Leave a comment